রোজালা বা চুকাই ফল জেলি বা চা হিসাবে আপনার পছন্দের হতে পারে ।


 

উদ্ভিদ বর্ণনা

গ্রীষ্মমন্ডলীয় পশ্চিম আফ্রিকার স্থানীয়, এটি উষ্ণ জলবায়ু পছন্দ করে। রোসেলা হল একটি আকর্ষণীয় বার্ষিক ঝোপ যা 1.5 মিটার উঁচুতে বড়, লবযুক্ত লালচে পাতা এবং আকর্ষণীয় হলুদ হিবিস্কাস-সদৃশ ফুল। রোসেলা সহজে বাড়তে পারে, কিছু কীটপতঙ্গের সমস্যা সহ, শক্ত এবং উত্পাদনশীল। বেশির ভাগ মাটির ধরনই উপযুক্ত, যদি সেগুলি সমৃদ্ধ এবং সুনিষ্কাশিত হয়। বৃদ্ধি, ফুল ও ফলের বিকাশ বজায় রাখতে প্রচুর পানি প্রয়োজন, মালচিং উপকারী। একটি ভাল ফসল উৎপাদনের জন্য যা প্রয়োজন তা হল তিন থেকে চারটি গাছ। গাছপালা সাধারণত প্রায় 3 মাস বয়সে ফসল কাটা শুরু করে এবং 9 মাস বা প্রথম তুষারপাত পর্যন্ত ক্রপিং চলতে পারে। ফলটি ফুল ফোটার প্রায় 3 সপ্তাহ পরে বাছাই করার জন্য প্রস্তুত, যখন তারা তাদের প্রশস্ত অংশে 2 - 3 সেমি জুড়ে হবে।

রোপণ বিবরণ

যখন চাষ করবেন: গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলে বসন্তের প্রথম দিকে বপন করুন, রোসেলাগুলি সহ্য করার জন্য কমপক্ষে 5 মাস হিম-মুক্ত প্রয়োজন। রোসেলাদের অঙ্কুরোদগম করার জন্য খুব উষ্ণ মাটির প্রয়োজন হয়, বিশেষত 25 ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি। অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে এটি অক্টোবরের বাইরের মতো দেরী হবে। কিছু বছর মাটি গরম হতে আরও বেশি সময় লাগতে পারে। তাই শীতল এলাকার উদ্যানপালকদের একটি ছোট বটম-হিট ইউনিট বা ওয়াটার হিটারের উপরের অংশ ব্যবহার করে বাড়ির ভিতরে বীজ শুরু করতে হবে।

রোপণের গভীরতা: 12 মিমি মিহি মাটি দিয়ে বীজ ঢেকে দিন।

ব্যবধান: 50 সেন্টিমিটার দূরত্বে বেশ কয়েকটি বীজ রোপণ করুন এবং সবচেয়ে শক্তিশালী চারা পাতলা করুন।


ব্যবহারসমূহ

খাদ্য: মাংসল ক্যালিক্স সালাদ, জেলি, ক্র্যানবেরি-সদৃশ সস, জ্যাম এবং কর্ডিয়াল, সিরাপ এবং ওয়াইনে ব্যবহৃত হয়। শুকনো লাল ক্যালিক্স চায়ের জন্য ব্যবহার করা হয় এবং এটি বাণিজ্যিক রেড জিঙ্গার, হিবিস্কাস এবং ফ্রুট চায়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। চায়ের স্বাদে গোলাপ-নিতম্বের মতোই এবং এতে ভিটামিন সি বেশি থাকে। বীজগুলোকে ভুনা করে ময়দা বানানো হয়। কচি পাতাগুলি ভাপানো বা ভাজা হতে পারে এবং প্রশান্ত মহাসাগরে রেড সোরেল নামে পরিচিত।

হেজ: রোসেলা গ্রীষ্মকালীন বাগানের জন্য একটি আকর্ষণীয় বার্ষিক হেজ বা উইন্ডব্রেক।



চুকাই, একটি টক জাতীয় সু-স্বাদু ফল। বৈজ্ঞানিকভাবে ফল বা ফুল বলা হলেও গ্রাম বাংলায় সবজি হিসেবে বেশ পরিচিত। ভোজনপ্রেমী বাঙালি এটিকে নানাভাবে খেয়ে থাকেন। শুধু চুকাই ফলই নয়, এর পাতার জনপ্রিয়তাও ফলের মতোই সমান। এটি খেতে যেমন সু-স্বাদু, তেমনি ব্যাপক ভেষজ গুণের অধিকারী। বিভিন্ন রোগ-বালাই নিরাময়সহ সুস্থ্য থাকার জন্য অতুলনীয় এই ফল ও পাতা।

চুকাই মূলত একপ্রকার উপগুল্ম জাতীয় উদ্ভিদের ফল। এর ইংরেজি নাম রোসেলা বা সরেল (Rosella, Sorrel) এবং বৈজ্ঞানিক নাম (Hibiscus sabdariffa)।সিলেটে এটিকে চুকাই বা হইলফা বলা হলেও অঞ্চলভেদে বিভিন্ন নামে ডাকা হয়। যেমন- অম্ব মধু, অম্বল মধু, চুকুল, মেডশ, মেট্টস, মেষ্টা, চুকুর, চুকুরি, চুপুরি, চুকোর, চুকা, চুক্কি, গোডা ইত্যাদি। আবার বিশ্বেও অন্যান্য দেশে ডাকা হয় আরো সুন্দর ও ভিন্ন ভিন্ন নামে।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই ফলের বাণিজ্যিক চাষ হয়। অনেক অঞ্চল থেকে এটি এখন প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এক সময় প্রতিটি গ্রামেই চুকাই ফলের গাছ দেখা গেলেও এখন পাওয়া যায় না। তবে হবিগঞ্জের মাধবপুর, চুনারুঘাট ও বাহুবলের বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায় এই চুকাই গাছ রয়েছে। বাণিজ্যিকভাবে চাষ না হলেও পাহাড়ি এলাকার প্রায় বাড়িতেই এই গাছ পাওয়া যায়।

উদ্ভিদ বিশেষজ্ঞদের মতে, সমতল ভূমির চেয়ে পাহাড়ি এলাকায় এই গাছ বেশি জন্মায়। তাছাড়া এই ফলটি পাহাড়িদের জনপ্রিয় খাবার। যার ফলে পাহাড়ে বসবাস করা বিভিন্ন জাতি এই ফলটি নিজেদের আঙ্গিনা বা বাড়ির আশপাশে রোপণ করে থাকেন। পাটজাতীয় এই ফলটি দিয়ে বিভিন্ন ধরনের সু-স্বাদু খাবার তৈরি করেন পাহাড়ি আধিবাসীরা।

চুকাই ফল ও পাতা দিয়ে তৈরি করা ভর্তা ও শাক গরম ভাতের সাথে খেতে অসাধারণ। চিংড়ি মাছ, শোল মাছ, ট্যাংড়া মাছ, পুটি মাছ দিয়ে এর ঝোল যে কোন ভোজনপ্রেমী মানুষ একবার খেলে দীর্ঘদিন মুখে লেগে থাকবে। অনেকে গরু কিংবা খাসির মাংসের সাথেও চুকাই পাতা ও ফল ব্যবহার করে থাকেন।

উদ্ভিদ বিশেষজ্ঞদের মতে,  এই চুকাই পাতা শুধু নিজেদের খাবার জন্যই নয়। বাণিজ্যিকভাবে চাষ করলে সম্ভাবনাময় একটি খাতে পরিণত হতে পারে। চুকাই দিয়ে উৎপাদিত চা, মেস্তা স্বত্ব, জ্যাম, জেলি, জুস, আচার ইত্যাদি বাজারজাত করা গেলে পাল্টে যাবে দেশের অর্থনীতির চিত্র। বিশেষ করে সিলেট অঞ্চলে এই শিল্পের অপার সম্ভাবনা রয়েছে।


অপরদিকে, খাবার ও সম্ভাবনাময় শিল্পের এই চুকাই ভেষজ উদ্ভিদ হওয়ায় এর স্বাস্থ্য উপকারিতাও অনেক। পুষ্টিবিদদের মতে, চুকাই দিয়ে যেকোন খাবার অন্যসব খাবারের তুলনায় অধিক পুষ্টিসম্বলিত। এক সময় চুকাই গাছ কবিরাজি ওষুধ হিসেবে ব্যাপক ব্যবহৃত হতো। চুকাই ফল ও পাতা উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। এছাড়া মূত্রবর্ধক, মৃদু কোষ্ঠ-নরমকারী, হৃদরোগ, ক্যানসার এবং স্নায়ুরোগের চিকিৎসায় অপরিসীম এটি। চুকাই পাতা ও ফলে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, কেরোটিন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ও অন্যান্য খাদ্য উপাদান রয়েছে।

চুকাই সম্পর্কে জানতে চাইলে বৃন্দাবন সরকারি কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আবু আহমদ আহসান কবির বলেন, ‘এটিকে ফল অথবা ফুল দুইটাই বলা যেতে পারে। এটির আধি নিবাস দক্ষিণ আফ্রিকা। তবে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এটি পাওয়া যায়। খেতে টক জাতীয় হলেও বেশ সু-স্বাদু। এছাড়া অনেক ঔষুধি গুণের অধিকারি এই ফলটি।’

তিনি বলেন- ‘এটি পাহাড়ি এলাকায় খুব ভালো জন্মে। তাই এই ফলের বাণিজ্যিক সম্ভাবনা রয়েছে।’

রোজালা বা চুকাই ফল জেলি বা চা হিসাবে আপনার পছন্দের হতে পারে । রোজালা বা চুকাই ফল জেলি বা চা হিসাবে আপনার পছন্দের হতে পারে । Reviewed by jkbovprn on জানুয়ারী ১৭, ২০২২ Rating: 5

কোন মন্তব্য নেই:

ads 728x90 B
Blogger দ্বারা পরিচালিত.